অবিরাম বর্ষায়ও থেমে নেই শিক্ষার্থীদের আড্ডা

প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ৬:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

রকিব কামাল

addaবছর তিনেক আগের কথা, বর্ষার কোন একদিন হবে। দিনটি মনে না থাকলেও মনে পড়ে সময়টা। তখন আমি শেষ বর্ষের ছাত্র। বর্ষায় চট্টগ্রামে অবিরাম বৃষ্টি হয়। আমরা বন্ধুরা প্রতিদিনই ছাতা নিয়ে ক্লাশে যেতাম এবং ক্লাশ শেষে হয় ক্লাশরুমে বা ঝুপড়িতে চুটিয়ে আড্ডা দিতাম। কিন্তু এতে আমাদের মন ভরতো না। একদিন ক্লাশ শেষে আমি ও আমার বন্ধু জিতু,পাপলু জয়াসহ আরো অনেকেই অনুষদ থেকে বেরিয়ে হঠাৎ ছাতাগুলো ছুঁড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। সত্যি সেই দিনের কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটার স্পর্শে আমি নতুন করে আবিষ্কার হচ্ছি এমনটা আমার কাছে মনে হচ্ছিলো সেইদিন।

কথা গুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সকিব হাসান। তিনি নিজের ক্যাম্পাস জীবনের বৃষ্টির দিনে আড্ডার স্মৃতিচারণ করেন এইভাবে।

সত্যি প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর ক্যাম্পাস জীবনে বর্ষার মেঘ যেন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। যা সবারই কমবেশি স্মরণীয় হয়ে থাকে। বর্ষার এই বৃষ্টিধারা ধরণীর সবকিছুরই যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তেমনি ক্যাম্পাসের আড্ডার সৌন্দর্য স্মৃতি বিজড়িত করে রাখে মনের মানসপটে। বর্ষার আকশে উজ্জলতা থাকেনা, থাকে অপূর্ব সিগ্ধতা। আড্ডার মাধ্যমে মনের অজান্তে গেয়ে ওঠে সুখের গান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। কাটাপাহাড়ের রাস্তা ও ঝুপড়ির আড্ডা মুগ্ধ করে সবাইকে। বর্ষাকালের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চলবে বৃষ্টি আর রোদের উঁকিঝুঁকি। চলবে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। আর বৃষ্টিতেও জমে উঠে ক্যাম্পাসের আড্ডাগুলো। ঝুপড়ি গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঠাই পাওয়া যায়না। গানের কন্ঠে তাল মিলিয়ে চলে আড্ডা।

বর্ষায় ক্লাস না থাকলেই খুশি থাকে আড্ডা প্রিয় শিক্ষার্থীরা। চবিতে আড্ডার অন্যতম স্থান হচ্ছে ঝুপড়ি, লাইব্রেরি ভবনের মূল গেইট ও শহীদ মিনার এছাড়া ও আছে সোনামী গার্ডেন ও বোটানিকাল গার্ডেন। কিন্তু বর্ষায় এইসব জায়গা থাকে ফাঁকা। তখন ঝুপড়ি, ক্লাশকক্ষ ও লাইব্রেরি ভবন হয়ে উঠে আড্ডার অন্যতম স্থান। এই আড্ডার বিষয় বস্তুু উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠে রাজনীতি,অর্থনীতি,সমাজব্যবস্থা সহ আরো অনেক।আবার কেউবা রুমে গ্রুপ হয়ে শুরু হয় টুয়েন্টিনাইনকার্ড খেলা, কোন রুমে হয় বির্তকের বাগান। আবার অনেক কটেজের উঠানেই চলে ক্রিকেট খেলা। আনন্দের গানে কটেজের পরিবেশ হয়ে উঠে মনোমুগ্ধকর।

আড্ডা প্রিয় এই মানুষগুলোর ক্যাম্পাসের এই বৃষ্টির দিনের কীভাবে আড্ডা দিচ্ছেন? সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহাজাহান বলেন, বৃষ্টিতে আড্ডার মজাই আলাদা। আর এই জন্যই আড্ডগুলো স্মৃতিময় হয়ে থাকবে আগামীদিনের। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলমগীর হোসেন জানান, ক্যাম্পাসের আড্ডাই আনন্দ আর বৃষ্টির দিনের আড্ডা আরো আনন্দ মুখর হয়ে উঠে। বর্ষার দিনে বই পড়ে সময় কাঠে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাফরিন হকের। কখনও আবার বান্ধুরী মিলে খিচুরী রান্না করে খাই। এই বিভাগের শিক্ষর্থী সানজিদার মতে,আড্ডার আনন্দই হলো গল্পগুজবকরা আর বর্ষার আড্ডা আনন্দ হয় তখন যখন ভুলে যাই লেখাপড়ার কষ্ট। সুলতান,আদম,পলাশ,দিনার ও হিমেল সহ আরো অনেকেই বলেছেন তাদের আড্ডারপ্রিয় ও অপ্রিয়কথা।

এভাবেই হয়েতো চলছে ক্যাম্পাস জীবনের আড্ডা।বৃষ্টি হোক আর রোদ হোক থেকে চলবে আড্ডা।আড্ডা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মিলমেলা।হিংসা ও বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে আড্ডা গড়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G